হাদীছের শ্রেণী ও প্রকারভেদ:
ছনদ তথা বর্ণনাধারার শেষ বা চূড়ান্ততা বিবেচনায় হাদীছ কত প্রকার ও কি কি?
ছনদ তথা বর্ণনাধারার শেষ বা চূড়ান্ততা বিবেচনায় খাব্র/হাদীছ তিন প্রকার:-
(১) মারফু‘ (২) মাওক্বোফ (৩) মাক্বতূ‘।
হাদীছ বা খাব্রে মারফূ‘ কাকে বলে এবং তা কত প্রকার ও কি কি?
যে সব কথা কিংবা কাজ কিংবা সম্মতি ও অনুমোদন স্পষ্টতঃ শব্দগতভাবে কিংবা বিধানগতভাবে রাছূলুল্লাহ 1 এর সাথে সম্বন্ধযুক্ত, তাকে মারফূ‘ হাদীছ বলে।
অন্য কথায়, যে বর্ণনাধারা বা বর্ণনাসূত্র (ছনদ) রাছূল 1 পর্যন্ত পৌঁছেছে, তাকে মারফূ‘ হাদীছ বা খাব্রে মারফূ‘ বলা হয়।
খাব্রে মারফূ‘ ছয় প্রকার:-
১। সুস্পষ্ট বাচনিক মারফূ‘ হাদীছ (المرفوع القولى صريحا)
যেমন- কোন সাহাবীর একথা বলা যে, “আমি রাছূলুল্লাহ-কে (1) এই— এই বলতে শুনেছি”। অথবা কোন সাহা্বী কিংবা অন্য কারো একথা বলা যে, “রাছূল 1 এই— এই বলতেন”।
২। কর্মসম্পর্কিত সুস্পষ্ট মারফূ‘ হাদীছ (المرفوع الفعلى صريحا)
যেমন- কোন সাহাবীর একথা বলা যে, “আমি রাছূলকে (1) এই——এই করতে দেখেছি”। অথবা কোন সাহাবী বা অন্য কেউ এরূপ বলা যে, “রাছূল 1 এই—– এই করতেন”।
৩। সুস্পষ্ট অনুমতি বা অনুমোদনমূলক মারফূ‘ হাদীছ (المرفوع التقريرى صريحا)। যেমন- কোন সাহাবীর একথা বলা যে “আমি রাছূল 1 এর উপস্থিতিতে এই ——- করেছি” কিংবা কোন সাহাবী বা অন্য কেউ একথা বলা যে, “অমুক ব্যক্তি রাছূল 1 এর উপস্থিতিতে এই এই করেছেন”। আর রাছূল 1 কার্যটিকে অস্বীকার করেছেন মর্মে কোন কিছু উল্লেখ না করা।
৪। বিধানগতভাবে বাচনিক মারফূ‘ বর্ণনা (المرفوع القولى حكما)।
যেমন- এমন কোন সাহাবী কর্তৃক, যিনি আহলে কিতাবদের থেকে কোন কথা গ্রহণ করেন বলে জানা নেই, এমন কোন কথা বলা যাতে যুক্তি, ইজতিহাদ, নিজস্ব অভিমত বা চিন্তা গবেষণনার কোন অবকাশ নেই। এমনিভাবে অচেনা-অদ্ভুত কোন বর্ণনার সাথেও কথাটির কোন সম্পর্ক নেই কিংবা কথাটি দুর্বোধ্য কোন বর্ণনার ব্যাখ্যাও নয়। উদাহরণ স্বরূপ, যেমন- কোন সাহাবী কর্তৃক অতীতের কোন সংবাদ দেয়া (যেমন- জগত সৃষ্টির সূচনা সম্পর্কে কোন সংবাদ দেয়া) কিংবা ভবিষ্যতের কোন বিষয়ের সংবাদ দেয়া (যেমন- ক্বিয়ামাতের পূর্বে সংগঠিত ফিতনা, ক্বিয়ামাতের ভয়াবহ অবস্থার সংবাদ দেয়া) কিংবা কোন কাজের বিশেষ কোন প্রতিদান বা শাস্তির সংবাদ দেয়া ইত্যাদি।
৫। কার্যত বিধানগত মারফূ‘ বর্ণনা (المرفوع الفعلى حكما)।
যেমন- কোন সাহাবী কর্তৃক এমন কোন কাজ করা, যাতে নিজস্ব যুক্তি, অভিমত বা চিন্তা-গবেষণার কোন অবকাশ নেই। উদাহরণ স্বরূপ যেমন- ‘আলী 3 কর্তৃক সূর্যগ্রহণের নামাযে প্রতি রাক্‘আতে একাধিক রুকূ‘ করা।
৬। বিধানগতভাবে অনুমোদিত মারফু‘ বর্ণনা (المرفوع التقريرى حكما)।
যেমন- কোন সাহাবী কর্তৃক এরকম সংবাদ প্রদান করা যে, তারা রাছূল 1 এর যুগে এই—–এই করতেন, অথচ রাছূল 1 তাদেরকে নিষেধ করতেন না বা মন্দ বলতেন না।
মারফূ‘র বিধান সম্বলিত আরো যেসব বাক্য রয়েছে (অর্থাৎ- যেসব বাক্য কোন বর্ণনার ছনদ মারফূ‘ হওয়া প্রমাণ করে) তম্মধ্যে হলো যেমন- কোন সাহাবীর একথা বলা যে, “এই কাজ হলো ছুন্নাত”, “আমাদের এই এই কাজের আদেশ দেয়া হয়েছে”, “আমাদেরকে এই কাজ থেকে নিষেধ করা হয়েছে”। অথবা কোন সাহাবী কর্তৃক কোন কাজ সম্পর্কে এরূপ বলা যে “এটা হলো আল্লাহ 0 কিংবা রাছূল 1 এর আনুগত্যমূলক” কিংবা “অবাধ্যতামূলক কাজ”।
যেমন- ‘আম্মার ইবনু ইয়াছির h এর কথা:- “যে ব্যক্তি সন্দেহপূর্ণ দিনে রোযা পালন করল, সে আবুল ক্বাছিম (মুহাম্মাদ 1) এর অবাধ্যতা করল”। এই আছারটি ছুনান গ্রন্থকারগণ তাদের স্ব স্ব গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন।
খাব্রে মাওক্বোফ কাকে বলে?
যে সব কথা, কাজ কিংবা সম্মতি ও অনুমোদন রাছূলুল্লাহ 1 এর কোন সাহাবীর প্রতি সম্বন্ধযুক্ত, তাকে মাওক্বোফ হাদীছ বলে।
অন্য কথায়, যে হাদীছের বর্ণনাধারা বা ছনদ কোন সাহাবী (3) পর্যন্ত পৌছেছে, তাকে মাওক্বোফ হাদীছ বা খাব্রে মাওক্বোফ বলা হয়।
খাব্রে মাওক্বোফকে “আছারে সাহাবী”ও (أثر الصحابة) বলা হয়।
খাব্রে মাক্বতূ‘ কাকে বলে?
যে সব কথা বা কাজ কোন তাবি‘য়ী কিংবা তাঁর পরবর্তী কারো প্রতি সম্বন্ধযুক্ত, তাকে মাকতূ‘ হাদীছ বলে।
অন্য কথায়, যে বর্ণনা বা খাব্রের বর্ণনাধারা অর্থাৎ ছনদ কোন তাবি‘য়ী (o) কিংবা তাব‘য়ে তাবি‘য়ী পর্যন্ত পৌঁছেছে, তাকে খাব্রে মাওক্বোফ বলা হয়।
খাব্রে মাওক্বোফকে “আছারে তাবি‘য়ী”ও (أثر التابعى) বলা হয়।
সূত্র:- আশ শাইখ ‘আব্দুল কারীম মুরাদ c ও আশ শাইখ ‘আব্দুল মুহছিন আল ‘আব্বাদ c সংকলিত পুস্তিকা “মিন আতইয়াবিল মানহি ফী ‘ইলমিল মুসতালাহ”- মাদীনা ইছলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশনী।