১। জুমু‘আর দিন গোছল করা এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হওয়া। কেননা রাছূলুল্লাহ 1 বলেছেন:-
إِذَا جَاءَ أَحَدُكُمُ الجُمُعَةَ، فَلْيَغْتَسِلْ.رواه البخاري
অর্থ- তোমাদের কেউ জুমু‘আর নামায আদায় করতে আসলে তার পূর্বে সে যেন গোছল করে নেয়।সাহীহ্ বুখারী
অন্য হাদীছে বর্ণিত রয়েছে,রাছূল 1 বলেছেন:-
غُسْلُ يَوْمِ الجُمُعَةِ وَاجِبٌ عَلَى كُلِّ مُحْتَلِمٍ.رواه البخاري
অর্থ- জুমু‘আর দিন গোছল করা প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক লোকের উপর ওয়াজিব।সাহীহ্ বুখারী
২। মিছওয়াক ব্যবহার করা। কেননা মিছওয়াক ব্যবহার করা ছুন্নাত। এর প্রমাণ হলো রাছূল 1 বলেছেন:-
لَوْلاَ أَنْ أَشُقَّ عَلَى أُمَّتِي أَوْ عَلَى النَّاسِ لَأَمَرْتُهُمْ بِالسِّوَاكِ مَعَ كُلِّ صَلاَةٍ.رواه البخاري
অর্থ- আমি যদি আমার উম্মাতের জন্য কিংবা মানুষের জন্য কষ্টকর মনে না করতাম, তাহলে তাদেরকে প্রত্যেক নামাযের সময় (বাধ্যতামূলক ভাবে) মিছওয়াক করার হুক্ম দিতাম।সাহীহ্ বুখারী
অপর হাদীছে বর্ণিত রয়েছে, রাছূলুল্লাহ 1 বলেছেন:-
مَعَاشِرَ الْمُسْلِمِينَ, إِنَّ هَذَا يَوْمٌ جَعَلَهُ اللَّهُ لَكُمْ عِيدًا, فَاغْتَسِلُوا, وَعَلَيْكُمْ بِالسِّوَاكِ.رواه الطبراني
অর্থ- হে মুছলিম জনগোষ্ঠী ! এটি হলো এমন এক দিন যে দিনকে আল্লাহ 0 তোমাদের জন্যে ‘ঈদের দিন বানিয়েছেন। অতএব তোমরা এই দিনে গোছল করো এবং অবশ্যই তোমরা মিছওয়াক করো।ত্বাবারানী
৩। ‘আতর বা যে কোন (হালাল) সুগন্ধি ব্যবহার করা। কেননা রাছূল 1 বলেছেন:-
لاَ يَغْتَسِلُ رَجُلٌ يَوْمَ الجُمُعَةِ، وَيَتَطَهَّرُ مَا اسْتَطَاعَ مِنْ طُهْرٍ، وَيَدَّهِنُ مِنْ دُهْنِهِ، أَوْ يَمَسُّ مِنْ طِيبِ بَيْتِهِ، ثُمَّ يَخْرُجُ فَلاَ يُفَرِّقُ بَيْنَ اثْنَيْنِ، ثُمَّ يُصَلِّي مَا كُتِبَ لَهُ، ثُمَّ يُنْصِتُ إِذَا تَكَلَّمَ الإِمَامُ، إِلَّا غُفِرَ لَهُ مَا بَيْنَهُ وَبَيْنَ الجُمُعَةِ الأُخْرَى .رواه البخاري و أحمد
অর্থ- যে ব্যক্তি জুমু‘আর দিনে গোছল করে ও সাধ্যানুযায়ী পবিত্রতা হাসিল করে, আর নিজের তেল ব্যবহার করে অথবা নিজ ঘরের সুগন্ধি থেকে সুগন্ধি ব্যবহার করে, অতঃপর (জুমু‘আর সালাতের জন্য) বের হয় এবং (অন্যদেরকে টপকে তাদেরকে কষ্ট দিয়ে নিজে সামনে যাওয়ার জন্য কিংবা আগে থেকে বসা লোকজনকে সরিয়ে মধ্যখানে নিজে বসার জন্য) দুজন লোকের মধ্যে ফাঁক করে না, তারপর তার জন্য যে পরিমাণ নির্ধারিত রয়েছে সেই পরিমাণ সালাত আদা করে, অতঃপর ইমাম যখন কথা বলেন (খুত্বাহ পাঠ করেন) তখন চুপ থাকে, তাহলে তার ঐ জুমু‘আ হতে পরবর্তী জুম‘আ পর্যন্ত সময়ের যাবতীয় গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়।সাহীহ্ বুখারী, মুছনাদে ইমাম আহ্মাদ
রাছূলুল্লাহ 1 আরো বলেছেন:-
حَقٌّ عَلَى كُلِّ مُسْلِمٍ الْغُسْلُ وَالطِّيبُ وَالسِّوَاكُ يَوْمَ الْجُمُعَةِ.رواه أحمد
অর্থ- প্রত্যেক মুছলমানের জন্য কর্তব্য হলো জুমু‘আর দিনে গোছল করা, সুগন্ধি (যদি থাকে) ব্যবহার করা এবং মিছওয়াক করা।মুছনাদে ইমাম আহ্মাদ
৪। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও যথাসম্ভব উত্তম কাপড় পরিধান করা। কেননা রাছূল 1 বলেছেন:-
عَلَى كُلِّ مُحْتَلِمٍ الْغُسْلُ يَوْمَ الْجُمُعَةِ، وَيَلْبَسُ مِنْ صَالِحِ ثِيَابِهِ، وَإِنْ كَانَ لَهُ طِيبٌ مَسَّ مِنْهُ.رواه أحمد
অর্থ- প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক লোকের উচিত জুমু‘আর দিনে গোছল করা, নিজের উত্তম কাপড় পরিধান করা এবং যদি তার নিকট সুগন্ধি থাকে তাহলে তা থেকে ব্যবহার করা।মুছনাদে ইমাম আহ্মাদ
৫। মাছজিদে প্রবেশ করেই (তাহিয়্যাতুল মাছজিদ) দুই রাক‘আত নামায পড়া, যদিও ইমামের খুতবা চলাকালীন মাছজিদে প্রবেশ করা হয়। কেননা রাছূল 1 বলেছেন:-
إِذَا جَاءَ أَحَدُكُمْ يَوْمَ الْجُمُعَةِ، وَالْإِمَامُ يَخْطُبُ، فَلْيَرْكَعْ رَكْعَتَيْنِ، وَلْيَتَجَوَّزْ فِيهِمَا.رواه مسلم
অর্থ- জুমু‘আর দিনে ইমাম খুতবা দিচ্ছেন এমতাবস্থায় তোমাদের কেউ যদি মাছজিদে প্রবেশ করে, তাহলে সে যেন সংক্ষিপ্ত করে দু’রাক‘আত সালাত পড়ে নেয়।সাহীহ্ মুছলিম
এ সম্পর্কে জাবির ইবনু ‘আব্দিল্লাহ 3 থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন:-
دَخَلَ رَجُلٌ يَوْمَ الجُمُعَةِ وَالنَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَخْطُبُ، فَقَالَ أَصَلَّيْتَ؟ قَالَ: لاَ، قَالَ: قُمْ فَصَلِّ رَكْعَتَيْنِ.رواه البخاري
অর্থ- একদা জমু‘আর দিনে নাবী 1 খুত্বাহ দিচ্ছিলেন, এমতাবস্থায় এক ব্যক্তি মাছজিদে প্রবেশ করলে তিনি (নাবী 1) তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি নামায পড়েছ? লোকটি বলল- না। তখন রাছূল 1 তাকে বললেন:- তাহলে তুমি দু’ রাক‘আত পড়ে নাও।সাহীহ্ বুখারী
অন্য বর্ণনায় বর্ণিত রয়েছে, রাছূল 1 বলেছেন:-
إِذَا جَاءَ أَحَدُكُمْ يَوْمَ الْجُمُعَةِ، وَقَدْ خَرَجَ الْإِمَامُ، فَلْيُصَلِّ رَكْعَتَيْنِ.رواه مسلم
অর্থ- জুমু‘আর দিনে ইমাম (জুমু‘আর খুত্বাহ দানের উদ্দেশ্যে) বের হয়ে যাওয়ার পরে যদি কেউ মাছজিদে আসে, তাহলে সে যেন ( প্রথমে ) দুই রাক‘আত (তাহিয়্যাতুল মাছজিদ) পড়ে নেয়।সাহীহ্ মুছলিম
৬। কোন রকম কথাবার্তা না বলে গভীর মনযোগ সহকারে ইমামের খুত্বাহ শুনা।
এর প্রমাণ হলো ইবনু ‘আব্বাছ h হতে বর্ণিত, রাছূল 1 বলেছেন:-
مَنْ تَكَلَّمَ يَوْمَ الْجُمُعَةِ وَالْإِمَامُ يَخْطُبُ، فَهُوَ كَمَثَلِ الْحِمَارِ يَحْمِلُ أَسْفَارًا، وَالَّذِي يَقُولُ لَهُ: أَنْصِتْ، لَيْسَ لَهُ جُمُعَةٌ.رواه أحمد, و ابن أبي شيبة و الطبرانى
অর্থ- যে ব্যক্তি জুমু‘আর দিনে ইমামের খুত্বাহ চলাকালীন কথা বলে, সে দলীল-দস্তাবেজের বোঝা বহনকারী গাধার ন্যায়। আর যে ব্যক্তি তাকে বলবে “চুপ করো’’ তার জুমু‘আ-ই নেই (অর্থাৎ সে জুমু‘আর সালাতের কোন ফাযীলাত লাভ করতে পারবে না)।মুছনাদে ইমাম আহ্মাদ, মুসান্নাফে ইবনু আবী শাইবাহ, ত্বাবারানী
এসম্পর্কে আবূ হুরায়রাহ 3 হতে বর্ণিত অন্য একটি হাদীছে রয়েছে, রাছূলুল্লাহ 1 বলেছেন:-
إِذَا قُلْتَ لِصَاحِبِكَ يَوْمَ الجُمُعَةِ: أَنْصِتْ، وَالإِمَامُ يَخْطُبُ، فَقَدْ لَغَوْتَ.رواه البخاري
অর্থ- জুমু‘আর দিন ইমামের খুত্বাহ চলাকালীন তুমি যদি তোমার সাথীকে (অর্থাৎ পাশের লোককে) বলো “চুপ করো” তাহলে এটা তুমি ভুল ও অনর্থক কাজ করলে।সাহীহ্ বুখারী
মোটকথা, খুত্বাহ চলাকালীন নিজে কথা বলা তো দূরের কথা, অন্যকে “চুপ থাকো’’ এধরনের কথাও বলা যাবে না।
৭। জুমু‘আর দিনে ছূরাতুল কাহ্ফ তিলাওয়াত করা।
এর প্রমাণ হলো, আবূ ছা‘য়ীদ খুদরী 3 হতে বর্ণিত, রাছূলুল্লাহ 1 বলেছেন:-
إِنَّ مَنْ قَرَأَ سُورَةَ الْكَهْفِ يَوْمَ الْجُمُعَةِ أَضَاءَ لَهُ مِنَ النُّورِ مَا بَيْنَ الْجُمُعَتَيْنِ.رواه الحاكم في المستدرك
অর্থ- যে ব্যক্তি জুমু‘আর দিনে ছূরা আল কাহ্ফ তিলাওয়াত করবে, পরবর্তী জুমু‘আ পর্যন্ত তার জন্য নূর চমকাতে থাকবে।মুছতাদরাকে হাকিম
অন্য হাদীছে বর্ণিত রয়েছে, রাছূলুল্লাহ 1 বলেছেন:-
من قرأ سورة الكهف في يوم الجمعة سطع له نور من تحت قدمه إلى عنان السماء يضيء له يوم القيامة وغفر له ما بين الجمعتين.رواه إبن مردويه
অর্থ- যে ব্যক্তি জুমু‘আর দিনে ছূরা আল কাহ্ফ তিলাওয়াত করবে, তার পায়ের নিচ থেকে আকাশ পর্যন্ত নূর চমকাতে থাকবে, ক্বিয়ামাতের দিন এই নূর তাকে আলো দেবে এবং পরবর্তী জুমু‘আ পর্যন্ত তার গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে।ইবনু মারদাওয়াইহ্
৮। জুমু‘আর দিনে রাছূল 1 এর প্রতি বেশি বেশি দুরূদ ও ছালাম পাঠ করা।
এর প্রমাণ হলো, আঊছ বিন আউছ 3 হতে বর্ণিত, রাছূলুল্লাহ 1 বলেছেন:-
إِنَّ مِنْ أَفْضَلِ أَيَّامِكُمْ يَوْمَ الْجُمُعَةِ، فِيهِ خُلِقَ آدَمُ، وَفِيهِ قُبِضَ، وَفِيهِ النَّفْخَةُ، وَفِيهِ الصَّعْقَةُ، فَأَكْثِرُوا عَلَيَّ مِنَ الصَّلَاةِ فِيهِ، فَإِنَّ صَلَاتَكُمْ مَعْرُوضَةٌ عَلَيَّ.رواه أبو داؤود و النسائي
অর্থ- তোমাদের সর্বোত্তম দিন হলো জুমু‘আর দিন। এ দিনে আদমকে (5) সৃষ্টি করা হয়েছে, এ দিন তাঁর জান ক্বব্য (মৃত্যু দান) করা হয়েছে, এ দিনই শিঙ্গায় ফুৎকার দেয়া হবে, এ দিনই মহাপ্রলয় সাধিত হবে। অতএব এ দিনে (জুমু‘আর দিনে) বেশি করে আমার প্রতি সালাত (দুরূদ) পাঠ করো, কেননা তোমাদের সালাত আমার কাছে পেশ করা হয়।ছুনানু আবী দাঊদ, ছুনানুন্ নাছায়ী
৯। জুমু‘আর দিনে বিশেষ করে দিনের শেষভাগে নীরবে একাগ্রচিত্তে পূর্ণ বিনয়ের সাথে বেশি বেশি আল্লাহ্র (7) কাছে প্রার্থনা করা।
এর প্রমাণ হলো আবূ ছা‘য়ীদ আল খুদরী ও আবূ হুরায়রাহ h হতে বর্ণিত হাদীছ, রাছূলুল্লাহ 1 বলেছেন:-
إِنَّ فِي الْجُمُعَةِ سَاعَةً لَا يُوَافِقُهَا عَبْدٌ مُسْلِمٌ يَسْأَلُ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ فِيهَا خَيْرًا إِلَّا أَعْطَاهُ إِيَّاهُ، وَهِيَ بَعْدَ الْعَصْرِ.رواه أحمد
অর্থ- নিশ্চয় জুমু‘আর দিনে এমন এক মুহুর্ত রয়েছে, যে মুহূর্তে কোন মুছলিম বান্দাহ যদি আল্লাহ্র কাছে কোনরূপ কল্যাণ কামনা করে, তাহলে আল্লাহ 0 তাকে তা দান করেন। আর সে মুহুর্তটি হলো ‘আসরের পর।মুছনাদে ইমাম আহ্মাদ
এ সম্পর্কে আরো বর্ণিত রয়েছে, রাছূলুল্লাহ 1 বলেছেন:-
يَوْمُ الْجُمُعَةِ اثْنَتَا عَشْرَةَ سَاعَةً، لَا يُوجَدُ فِيهَا عَبْدٌ مُسْلِمٌ يَسْأَلُ اللَّهَ شَيْئًا إِلَّا آتَاهُ إِيَّاهُ، فَالْتَمِسُوهَا آخِرَ سَاعَةٍ بَعْدَ الْعَصْرِ.رواه النسائ و الحاكم
অর্থ- জুমু‘আর দিন ১২ ঘন্টা সময়। তন্মধ্যে এমন এক মূহুর্ত রয়েছে যে মূহুর্তে যে কোন মুছলিম বান্দাহ্ আল্লাহ্র নিকট (কল্যাণকর) যা চাইবে, আল্লাহ তাকে তা দান করবেন। ‘আসরের পরে দিনের শেষভাগে সেই মূহুর্তটাকে তালাশ করো।ছুনানুন্ নাছায়ী, মুছতাদরাকে হাকিম
সূত্র:-
১) ‘আল্লামা আশ্ শাইখ মুহাম্মাদ ইবনু জামীল যাইনূ সংকলিত- আরকানুল ঈমান ওয়াল ইছলাম।
২) ফিক্বহুছ্ ছুন্নাহ লিল ‘আল্লামা আছ্ছায়্যিদ ছাবিক্ব
৩) আল ফিক্বহু ‘আলাল মাযাহিবিল আরবা‘আহ লি আব্দির্ রহমান আল জাযিরী।
৪) বুলূগুল মারাম লিল ‘আল্লামা আল হাফিয ইবনু হাজ্র আল ‘আছক্বালানী।
৫) যাদুল মা‘আদ লিল ‘আল্লামা আল হাফিয ইবনুল ক্বায়্যিম আল জাওযিয়্যাহ।
৮) আল মাজমূ‘ লিল ইমাম আশ শাফি‘য়ী।
৭) আল মুগনী লিল ইমাম ইবনু ক্বোদামাহ্।