‘আল্লামা ইবনুল ক্বায়্যিম o তাঁর বক্তব্যে বলেছেন যে, আল্লাহ্র পথ বলতে যে বিষয়টিকে বুঝানো হয়, সেটি হলো তাওহীদের দ্বিতীয় ভিত্তি “محمد رسول الله” (মুহাম্মাদ 1 আল্লাহ্র রাছূল)।
“لا إله إلا الله” (আল্লাহ ছাড়া আর কোন মা‘বূদ তথা উপাস্য নেই) এই ঘোষণা প্রদানের সাথে সাথে “محمد رسول الله” (মুহাম্মাদ 1 আল্লাহ্র রাছূল) এ বিষয়টি এসে যায়।
“মুহাম্মাদকে (1) আল্লাহ্র রাছূল বলে বিশ্বাস ও স্বীকার করা” এ বিষয়টি যেমন তাওহীদের দ্বিতীয় ভিত্তি, তেমনি তা দ্বীনে ইছলামের দ্বিতীয় অবশ্যকরণীয় কাজ এবং তা যে কোন নেক ‘আমাল আল্লাহ্র কাছে গৃহীত হওয়ার দ্বিতীয় শর্ত।
কেননা নিম্নোক্ত দু’টি শর্ত পূরণ ব্যতীত মানুষের কোন নেক ‘আমালই আল্লাহ্র (7) নিকট গৃহীত বা গ্রহণযোগ্য হয় না। শর্ত দুটি হলো যথাক্রমে:-
১। ইখলাস তথা দ্বীনকে একমাত্র আল্লাহর (0) জন্যে খাঁটিভাবে নিবেদিত করা।
অর্থাৎ- দ্বীনের যাবতীয় কাজ-কর্ম একনিষ্ঠভাবে একমাত্র আল্লাহ্র (8) সন্তুষ্টি অর্জনের নিমিত্তে করা।
২। ইত্তিবা‘য়ে রাছূল 1 ।
অর্থাৎ- জীবনের সর্বক্ষেত্রে এবং বিশেষ করে ‘ইবাদাতের ক্ষেত্রে রাছূলুল্লাহ্কে (1) অনুসরণ করা।
আমি এখানে এ মূহুর্তে এই মহান মূলনীতির উপর আলোকপাত করছি না, কারণ এখানে আমাদের আলোচনার মূল বিষয়বস্তু হলো রাছূল 1 এর প্রদর্শিত সেই পথের পরিচয় ও বিবরণ দেয়া, যে পথের অনুসরণ ব্যতীত আল্লাহ্কে পাওয়া যায় না কিংবা আল্লাহ পর্যন্ত পৌঁছা যায় না। আল্লাহ্কে (0) পেতে হলে, আল্লাহ্র সন্তুষ্টি অর্জন করতে হলে সর্বাগ্রে তাঁর (আল্লাহ্র) পথনির্দেশ এবং মানব জীবনের প্রকৃত ও অভিষ্ট লক্ষ্য-উদ্দেশ্য সম্পর্কে অবশ্যই জানতে হবে, জ্ঞান অর্জন করতে হবে। কেননা অন্ধকারে কাঙ্ক্ষিত বস্তুকে খুজে পাওয়া দুষ্কর।সূত্র:- আল ফাওয়ায়িদ লিল ইমাম আল ‘আল্লামা ইবনুল ক্বায়্যিম আল জাওযিয়্যাহ, পৃষ্ঠা নং -২২৩
সুতরাং প্রথমেই আমাদেরকে সুস্পষ্টভাবে এ কথাটি জানতে হবে যে, আল্লাহ্র (b) পথ হলো মাত্র একটি। আর যেহেতু আল্লাহ্র (0) পথই হলো রাছূল 1 এর পথ, তাই যারা নিজেদের মনগড়া বিভিন্ন পথ ও মতের দিকে আহবান করে মানবজাতিকে বিশেষ করে মুছলিম উম্মাহ্কে বিভিন্ন দল উপদলে বিভক্ত এবং তাদেরকে পরস্পর বিচ্ছিন্ন করতে চায়, তাদের থেকে পুরোপুরি সতর্ক ও সাবধান থাকতে হবে। তাওহীদের সুশীতল ছায়াতলে মানবজাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য ইছলাম প্রবর্তিত হয়েছে।
তাই দ্বীনে ইছলাম সবসময় তার অনুসারীদের ক্বোরআন ও ছুন্নাহ্র উপর ঐক্যবদ্ধ থাকার এবং বিচ্ছিন্নতা অবলম্বন না করার নির্দেশ দেয়।
যেমন, ক্বোরআনে কারীমে আল্লাহ b ইরশাদ করেছেন:-
وَاعْتَصِمُوا بِحَبْلِ اللَّهِ جَمِيعًا وَلَا تَفَرَّقُوا وَاذْكُرُوا نِعْمَتَ اللَّهِ عَلَيْكُمْ إِذْ كُنْتُمْ أَعْدَاءً فَأَلَّفَ بَيْنَ قُلُوبِكُمْ فَأَصْبَحْتُمْ بِنِعْمَتِهِ إِخْوَانًا.سورة آل عمران- ٣٠١
অর্থাৎ- আর তোমরা সম্মিলিতভাবে আল্লাহ্র রজ্জুকে সুদৃঢ় হস্তে ধারণ করো এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না। এবং তোমরা সে নি‘মাতের কথা স্মরণ করো যা আল্লাহ তোমাদিগকে দান করেছেন। তোমরা পরস্পর শত্রু ছিলে অতঃপর আল্লাহ তোমাদের অন্তরে সম্প্রীতি দান করেছেন। তাই এখন তোমরা তার অনুগ্রহের কারণে ভাই ভাই হয়ে গেছ।ছূরা আ-লে ‘ইমরান -১০৩
মুছলমানদেরকে ঐক্যবদ্ধকারী এই ঈমানী রজ্জুর বিশদ বিবরণ ক্বোরআনে কারীমে বিদ্যমান রয়েছে। ক্বোরআনে কারীমই হলো মুছলমানদেরকে ঐক্যবদ্ধকারী ঈমানী রজ্জু।
‘আব্দুল্লাহ ইবনু মাছ‘উদ 3 থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন যে, “আল্লাহ্র এই পথটি সুস্পষ্ট ও সুনির্ধারিত। এই সরল-সঠিক পথ থেকে মানুষকে বিচ্যুত করার জন্য এবং এ পথ থেকে তাদেরকে দূরে সরে আসার জন্য শয়তান সব সময় আহবান জানায়। সে ডাকতে থাকে “হে আল্লাহ্র বান্দাহগণ! তোমরা এদিকে এসো, এই হচ্ছে পথ”। কিন্তু প্রকৃত মু’মিনগণ শয়তানের এ ডাকে সাড়া না দিয়ে বরং তারা আল্লাহ্র পথের উপর তথা ক্বোরআন ও ছুন্নাহ্র উপর অনঢ় ও অবিচল থাকেন।আছারটি সাহীহ্। ফাযায়িলুল ক্বোরআন লি আবি ‘উবাইদ, পৃষ্ঠা নং- ৭৫। ছুনানে দারিমী- ২/৪৩৩। আছ্ছুন্নাহ লি ইবনে নাস্র, আছার নং- ২২। আত্ত্বাবারানী-৯/৯০৩১। আশশারী‘আহ লিল আজুররী, আছার নং- ১৬। আল ইবানাহ লি ইবনে বাত্ত্বাহ, আছার নং- ১৩৫